২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আওয়ামীলীগের প্রার্থী চূড়ান্ত, বাদ পড়ছেন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা

-

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে নতুন-পুরনো মিশেলে আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের এমপি প্রার্থীদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমপিদের মধ্যে যারা বিতর্কিত ও জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থেকে বৈতরণী পার হতে পারবেন এমন নতুন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জোট-মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগির পরেই একসাথে জোটগতভাবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ৩০০ আসনের প্রায় চূড়ান্ত করা তালিকার মধ্যে ২২০ আসন রেখে ৮০ আসন জোট-মহাজোটকে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। জনপ্রিয়তার ব্যারোমটিারের ওপর নির্ভর করছে ওই সংখ্যাটা কমবে, না বাড়বে। জোট-মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা জোট প্রধান ও জোটের মুখপাত্রের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। এসব নিয়ে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে জোট প্রধান চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ একা নেতা জানিয়েছেন, মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করতে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করেছেন দলে সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব জরিপ, দল পরিচালিত জরিপ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তালিকা থেকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, বর্তমান এমপি ও মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য মিলে ৬৫ থেকে ৭০ জনের মতো বাদ পড়েছেন। গত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীসহ মোট ৫০ জন মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন। বাদ পড়াদের আসনে নতুন ও তরুণ প্রার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে। শেষমেশ নানা হিসাব মিলাতে গিয়ে প্রত্যেক দিনই তালিকায় কাটছাঁট করা হচ্ছে। চলছে সংযোজন-বিয়োজন। চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা না করা পর্যন্ত কেউ চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন- এটা বলা যাচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর জরিপ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, দলীয় জরিপ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা তথ্য সংগ্রহ করে একাধিক তালিকা তৈরি করেন। এর মাধ্যমে কোন আসনে কতজন প্রার্থী আছে, নতুন কতজন প্রার্থী, কোন আসনে কোন প্রার্থীর অবস্থান কেমন- এসব সার্বিক বিষয়ে তীক্ষè নজর রেখেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

এ ছাড়াও বর্তমান এমপিদের মধ্যে তৃণমূলে কার অবস্থান পোক্ত, কার অবস্থান নড়বড়ে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধানের সুস্পষ্ট ধারণা আছে। সূত্র আরো জানায়, সব জরিপের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে আসনভিত্তিক তিনশত আসনে কতজন প্রার্থী আছে তার একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বর্তমান এমপিদের মধ্যে কার অবস্থান কেমন তা চিহ্নিত করে জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবে এমন সর্বশেষ এমপি-মন্ত্রীদের তালিকা তৈরি করা হয়। যারা বিতর্কিত ও জনপ্রিয়তার সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে এমন প্রার্থীদের সতর্ক করলেও যারা উত্তীর্ণ হতে পারেননি কেবল তাদের বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ জোট-মহাজোটের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে বাদ পড়ছেন। জোট-মহাজোট নেতাদের ক্ষেত্রে একইভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে। তবে দুয়েকজন নানা সমীকরণের কারণে উতরে যেতে পারেন। 

কবে নাগাদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে পারে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইসিতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৭ নভেম্বর। এর আগেই জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা নমিনেশনটা দিয়েছি জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে। তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। তবে ফাইনাল ফিনিশিং বাকি আছে। আমাদের অ্যালায়েন্সের সাথে আলোচনা করে ফাইনাল করা হবে। আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবেই দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মনোনয়ন পাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, যেসব প্রার্থী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন ও উন্নয়ন তুলে ধরছেন, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যাদের সুসম্পর্ক আছে তারাই মনোনয়ন পাবেন এটাই স্বাভাবিক।

 


আরো সংবাদ



premium cement